দেশ 

অবকি বার চারশো পার স্লোগানের জনক নরেন্দ্র মোদি কী কংগ্রেসকে ভয় পাচ্ছেন?

শেয়ার করুন

সেখ ইবাদুল ইসলাম : গত বছর নভেম্বর মাসেই দেশের মানুষের কাছে জানিয়ে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবার বিজেপি ৩৭০ এবং এনডিএ জোট ৪০০ এর বেশি আসন পেয়ে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন হতে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আব কি বার চারশো পার এই স্লোগান ছিল দেশের জনতাকে অগ্রাহ্য করার লক্ষণ। স্বাধীন দেশের ৭৭ বছরের ইতিহাসে কোন দেশনায়ক কোন সময় জোর করে জাতির উপরে চাপিয়ে দিতেন না যে আমরা এত আসন পেয়ে ক্ষমতায় আসতে চলেছি। জহরলাল নেহেরু থেকে শুরু করে অটলবিহারী বাজপেয়ি থেকে শুরু করে ডঃ মনমোহন সিং পর্যন্ত সবাই বলতেন দেশের মানুষ যদি চান তবেই তাঁরা ক্ষমতায় আসতে পারবেন।

২০০৪ সালে অটল বিহারী বাজপেয়ি শাইনিং ইন্ডিয়ার বার্তা দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে তিনি বলেছিলেন দেশের মানুষ যদি শাইনিং ইন্ডিয়ায় আকৃষ্ট হন তবেই আমাকে ভোট দেবেন। সেবার অটল বিহারী বাজপেয়িকে দেশের মানুষ ভোট দেননি। ক্ষমতাচ্যুত হন বিজেপির প্রথম প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী। ক্ষমতা চলে যাওয়ার পর নির্দ্বিধায় দেশের মানুষের এই জনাদেশকে তিনি মেনে নিয়েছিলেন এবং অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। স্বাধীন ভারতের সম্ভবত  প্রথম প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, যিনি একাই বলেন, মানুষের কথা শুনেন কম। ইন্দিরা গান্ধীকে বলা হয় স্বৈরাচারী শাসক। বিরোধী দলের অনেক নেতা এখনো ইন্দিরা গান্ধীকে জরুরি অবস্থার জন্য দায়ী করে থাকেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, সংবিধানের বাধ্যবাধকতার মধ্যে থেকে ইন্দিরা গান্ধী দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন। কিন্তু আজকে যা হচ্ছে তা কোন অংশেই জরুরি অবস্থার চেয়ে ভালো নয়। যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশের জনতাকে অগ্রাহ্য করে বলেছিলেন আবকি বার ৪০০ পার। সেই নরেন্দ্র মোদী এখন কংগ্রেসের ইস্তেহার এর ভুল ব্যাখ্যা করছেন।

Advertisement

দেশের একজন প্রধানমন্ত্রী হয়ে মুসলমানদের নিশানা করছেন যা এক কথায় সংবিধান বিরোধী বলে মনে করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসে একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এই মিথ্যাচার করতে পারেন না। কংগ্রেসের ইশতেহারে কি রয়েছে? সেটা যদি আপনারা একবার ভালো করে পড়েন তাহলে এটাই স্পষ্ট হয়ে যাবে তার মধ্যে কোথাও হিন্দু মুসলমান নেই।! তারপরেও মোদীজি এমন ভাবে মানুষের কাছে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছেন তাতে মনে করা হচ্ছে যে কংগ্রেস যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে যা করবেন সব মুসলমানদের জন্য করবেন। হিন্দুরা ব্রাত্য হয়ে যাবে!

আচ্ছা মোদীজি দশ বছর ক্ষমতায় আছেন আপনার আমলে এদেশের হিন্দুরা পেয়েছে কি? সেটা যদি একটু বলেন। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি আসমান ছুঁয়েছে জিনিসপত্রের দাম এমনভাবে বেড়েছে অসহায় হয়ে পড়েছে সাধারণ নাগরিকরা। সেই নাগরিকদের মধ্যে মুসলমানরাও যেমন রয়েছে একইভাবে হিন্দু সম্প্রদায় রয়েছে।। এ দেশের ৮১ কোটি জনগণকে আপনি সপ্তাহে পাঁচ কেজি চাল গম দান করছেন এটা কি লজ্জার কথা নয়। যে প্রধানমন্ত্রী বলছেন, এই ভারতকে আমি বিকশিত ভারত করে দেব সেই প্রধানমন্ত্রী একাশি কোটি নাগরিককে বিনামূল্যে চাল ডাল দিচ্ছেন। তার মানে এটা এ দেশের একাশি কোটি নাগরিক গরিব, যারা চাল ডাল কিনতে পারছেন না। তাহলে দারিদ্র সীমার নিচে থাকা মানুষদের বা যারা গরীব যাদের চাল ডাল কেনার ক্ষমতা নেই তাদের আর্থিক উন্নয়ন সামাজিক উন্নয়নের ব্যবস্থা না করে এতদিন ধরে আপনি করলেন টা কী? দেশের মানুষ জানতে চাই!

এবার আসি কংগ্রেসের ইস্তাহারে আছেটা কি? কংগ্রেসের  ইশতেহারে বলা হয়েছে তারা যদি ক্ষমতায় আসে এদেশের সাধারণ নাগরিককে পাঁচটি ন্যায় দেবেন। কি কি সেই ন্যায়? কৃষকের প্রতি ন্যায়, শ্রমিকের প্রতি ন্যায়, মহিলাদের প্রতি ন্যায়, যুব সম্প্রদায়ের প্রতি ন্যায় এবং সামাজিক ন্যায়। এই পাঁচটি ন্যায় দেওয়ার কথা তারা বলেছে।

কৃষকের প্রতি ন্যায়।কংগ্রেস ক্ষমতায় আসলে তাদের ফসলের ন্যায্য মূল্য দেওয়ার কথা বলেছে। কংগ্রেস বলেছে, তারা ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে এদেশের কৃষক সম্প্রদায়ের উৎপন্ন ফসলের জন্য ন্যূনতম দাম তারা বেঁধে দেবে। একইসঙ্গে স্বামীনাথন কমিটির রিপোর্ট কার্যকর করবে।

শ্রমিকের প্রতি ন্যায়। শ্রমিকদের জন্য কংগ্রেস বলেছে তারা যাতে ন্যূনতম একটা আয় করতে পারে সেই ব্যবস্থা কংগ্রেস করবে। প্রথমেই তারা যে কাজটা করবে ১০০ দিনের কাজের মজুরিটা বাড়িয়ে ৪০০ টাকা করে দেবে। ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে তারা এই কাজটা করবে।

মহিলাদের প্রতি ন্যায়। কংগ্রেস বলেছে তারা যদি ক্ষমতায় আসতে পারে তালে এ দেশের গরীব মানুষ যারা রয়েছেন তাদের পরিবারের সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ মহিলাটিকে ১ লক্ষ টাকা প্রতি বছর দেবে, প্রতিমাসে ৮৫০০ টাকা করে দেওয়া হবে।

যুব সম্প্রদায়ের প্রতি ন্যায়। কংগ্রেস দাবি করেছে তারা যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে যে সকল ছেলে মেয়ে সদ্য পড়াশোনা করে কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে আসছে তাদের জন্য এক বছরের ইন্টার্নশিপ চালু করবে। এই এক বছর ইন্টার্নশিপ করার জন্য বছরে এক লক্ষ টাকা পাবে ওই ছেলেটি বা ওই মেয়েটি। রাহুল গান্ধীর বার্তা হল দেশের বাইশ জন কোটিপতির জন্য যদি নরেন্দ্র মোদি ১০ লক্ষ কোটি টাকা দান করতে পারেন। তাহলে আমিও এই গরিব মানুষের জন্য ১০ লক্ষ কোটি টাকা দান করতে পারব। রাহুলের এই কথার মধ্যে কোথাও কি অন্যায় রয়েছে সাধারণ মানুষ কি বলে?

আর সামাজিক ন্যায়! এটাই এখন নরেন্দ্র মোদির কাছে মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে! কংগ্রেস বলেছে তারা ক্ষমতায় আসলে এদেশের মানুষদের জন্য জাতভিত্তিক গণনা করা হবে। শুধু গণনা নয় তাদের আর্থ ও সামাজিক প্রেক্ষাপট নিয়ে সমীক্ষা করা হবে। এর ফলে এদেশের ৯০ শতাংশ মানুষ এই আর্থিক সমীক্ষার মধ্যে পড়বে! রাহুল গান্ধীর দাবি আর্থিক সমীক্ষা হয়ে যাওয়ার পর আমার সরকার দেখতে পাবে কোন সম্প্রদায় সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে আছে, তাদের জন্য আমি ব্যবস্থা নেব। তাদের জন্য আমি বিশেষ বিশেষ পদক্ষেপ নেব,তাদেরকে যাতে সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনা যায় সে চেষ্টা করব! এই যে সামাজিক ন্যায় প্রকল্প রাহুল গান্ধীর চিন্তাভাবনা স্বাধীনতার ৭৭ বছরে এভাবে এদেশের কোন রাজনীতিবিদ করেননি এ কথা আমরা জোর করেই বলতে পারি!

তথাকথিত গণমাধ্যমগুলি রাহুলের এই খবরকে চেপে রাখতে পারে কিন্তু দুঃখের হলেও সত্য নরেন্দ্র মোদী যত রাহুলকে আক্রমণ করছেন ততই যেন রাহুলের এই বক্তব্য সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। গত দুদিন আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার দলের প্রার্থীদের চিঠি লিখে বলেছেন, প্রচারে মুসলিম এবং তফসিলি জাতিদের নিয়ে প্রচার করতে থাকুন। বলতে থাকুন যদি কংগ্রেস ক্ষমতায় আসে তাহলে তফসিলি জাতির সংরক্ষণ কেড়ে নিয়ে মুসলিমদের দিয়ে দেবে একটা ডাহা মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি। দেশের মিডিয়া চুপ করে বসে আছে ভাবতে লজ্জা লাগছে।

গণমাধ্যম গুলোর এখন কাজ হচ্ছে রাহুল গান্ধী কেন ভোটে দাঁড়াচ্ছেন না আমেথিতে, কেন রায়বেরেলিতে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী দাঁড়াচ্ছেন না। এসব নিয়ে তরজায় মেতে আছে আমাদের দেশের মিডিয়া। দেশের মানুষের স্বার্থে নরেন্দ্র মোদী কি করেছেন আর রাহুল গান্ধীর কি ভাবনা সেটা নিয়ে কোন মিডিয়া প্রচারে নামছে না। এর ফলে দেশের গণতন্ত্র দুর্বল হচ্ছে এবং সাধারন মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে। দেশে একটা শ্রেণীর মানুষ আরো ধনী হচ্ছে আর একটা শ্রেণীর মানুষ গরিব থেকে আরও গরিব তর হচ্ছে ।আমাদের দেশের স্বাধীনতার সংগ্রামীরা এই স্বাধীনতা চাননি।

কংগ্রেসের ইশতেহারকে বলা হচ্ছে স্বাধীন ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইশতেহার। এই ইশতেহার কার্যকরী হলে দেশের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার আমূল পরিবর্তন হয়ে যাবে। আর মানুষ যদি একবার বুঝতে পারে কংগ্রেস জনমুখী প্রকল্প গুলির কথা। মানুষ যদি একবার বুঝতে পারে কংগ্রেসের চিন্তাভাবনা দেশের সাধারণ নাগরিকের জীবন যাত্রার আমূল পরিবর্তন হবে।  তাহলে পরিবর্তন শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র। আর এখানেই ভয় পেয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। তাই তিনি মিথ্যার বেসাতি করে তফসিলি জাতিদের সঙ্গে মুসলমানদের মধ্যে দ্বন্দ্ব লাগাতে তৎপর হয়েছেন। যা এক কথায় দেশের সংহতির পক্ষে বিপজ্জনক। আর আমাদের মনে হয়েছে নরেন্দ্র মোদির যতই এই ধরনের কথা বলবেন ততই তার ভোট কমে যাবে। কারণ মনে রাখতে হবে ২০১৪ সালে তিনি এদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন তারপর দশ বছর কেটে গেছে। দেশের মানুষ তাকে একবার নয় দু দুবার ক্ষমতায় বসিয়েছে, তারপরেও তিনি যদি এখনও হিন্দু-মুসলমান করতে থাকেন উন্নতির দিশা না দেখিয়ে তাহলে আর যাই হোক ভারতের সাধারন নাগরিকরা সমর্থন দেবে না। এটা আমাদের বিশ্বাস এটাই ভারতের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ।

 


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ